IELTS স্পিকিং টেস্টের অভিজ্ঞতা

IELTS স্পিকিং টেস্টের অভিজ্ঞতা

স্পিকিং পরীক্ষার তারিখ ছিলো ২৬শে নভেম্বর, ২০২০ ব্রিটিশ কাউন্সিল, সিলেট (British Council, Sylhet) । এর আগে ২০১৮ তে আইডিপি, সিলেটে (IDP, Sylhet) স্পিকিং পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তবে সেবার স্পিকিং এর ডেট ছিলো বাকি তিনটা মডিউল(লিসেনিং, রিডিং আর রাইটিং) পরীক্ষার পরে। সেই পরীক্ষায় স্পিকিং মডিউলে ৭.৫ পেয়েছিলাম। আমার যেহেতু আগে একবার পরীক্ষা দেবার অভিজ্ঞতা ছিলো, সেজন্য জন্য বেশ ফুরফুরে মেজাজে চলে গেলাম পরীক্ষা দিতে। এক্সামিনারের সাথে সামনা-সামনি বসে কথা বলতে হবে, তাই ফরমাল ড্রেস-আপ করেই গেলাম।

কোথায় পরিক্ষা দিলামঃ

সিলেটে ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্পিকিং পরীক্ষা হয় সুবিদবাজারে অবস্থিত আর্কেডিয়া্ সেন্টারের ৫ম তলায়। ওই জায়গাটা আমার বাসা থেকে বেশ খানিকটা দুরে আর যেতে মোটামুটি ৩০-৪০ মিনিট এর মত সময় লাগে। আম্বরখানায় জ্যামে পরতে পারি এই কথা চিন্তা করে প্রায় ১ঘন্টা আগেই আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। যাইহোক, ভাগ্য বেশ ভালো ছিলো তাই জ্যাম এ পরতে হয় নি।

তখন করোনার সময় চলছিলো, তাই বিল্ডিং এ প্রবেশের ব্যপারে বেশ কড়াকড়ি দেখলাম। সিকিউরিটির লোকজন মাস্ক ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না। সবাইকে হাতে হ্যান্ড-সেনিটাইজার দিয়ে দিচ্ছে আর থার্মোমিটার দিয়ে চেক করে দেখছে জ্বর আছে কিনা। সব কিছু ঠিক থাকলেই কেবল লিফটে উঠতে দিচ্ছে। যথারীতি সব নিয়মকানুন মেনে চেকিং শেষে ভেতরে চলে গেলাম। ব্রিটিশ কাউন্সিলের একজন রিপ্রসেন্টেটিভ আমার পাসপোর্ট দেখলেন এবং ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে বললেন। ওয়েটিং রুমে ঢুকেই দেখি অসুস্থ একজন পরীক্ষার্থী বসে আছেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিপ্রসেন্টেটিভ তাকে অনুরোধ করলেন অসুস্থ শরীর নিয়ে পরীক্ষা না দেবার জন্য আর কিভাবে ডেট চেঞ্জ করতে হবে সেসব নিয়মও বলে দিলেন। পরে জেনেছি, পরীক্ষার টেনশনে তার ব্লাড-প্রেসার কমে গিয়েছিলো। অসুস্থ পরীক্ষার্থীর সাথে তাদের আন্তুরিকতা দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছিলো।

কতজন পরীক্ষার্থী ছিলোঃ

কোন এক অজ্ঞাত কারনে মোটামুটি সবাই IDP তে পরীক্ষা দিতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু আমি যেহেতু দুই জায়গাতেই পরীক্ষা দিয়েছি, তাই সেরকমের কোন পার্থক্য আমার চোখে পড়ে নি। গতবার IDP তে যখন পরীক্ষা দিয়েছিলাম, এত পরীক্ষার্থী (পড়েন মাছের বাজার) ছিলো যে প্রায় ৩ ঘন্টা ওয়েটিং রুমে বসে থাকতে হয়েছিলো। কিন্তু এবার British Council এ গিয়ে আমি পুরাই অবাক। সেখানে আমি সহ মোট তিনজন পরীক্ষার্থী ছিলো। আমি যেহেতু গল্পবাজ একজন মানুষ তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের একজনের সাথে বেশ খাতির হয়ে গেল। উনি বললেন, “ভাই তিন দিন আগে রেজিস্ট্রেশন করছি, কিছুই প্রিপারেশন নেই নাই, যা মনে আসে বলে দিবো”। আমি বললাম, “আপনার কনফিডেন্স আছে, আপনি পারবেন”। এই গল্পগুজব করতে করতে আমার ডাক পড়লো।

কঠিন নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ

ব্রিটিশ কাউন্সিলের তিনস্তরের সিকিউরটি চেকিং শেষ করে একটা রুমে চলে গেলাম ফিঙ্গার প্রিন্ট আর ফটো তোলার জন্য। ফটো তোলার পর আমাকে আমার কেন্ডিডেট নাম্বার জানিয়ে দেয়া হলো আর অন্য একটা রুমে চলে যেতে বললো। এখানে বলে রাখি, করোনা পেন্ডেমিক শুরুর আগে নিয়ম ছিলো স্পিকিং পরীক্ষার সময় এক্সামিনারের হাতে পাসপোর্ট দিতে হবে যাতে উনি আইডি চেক করে দেখতে পারেন। কিন্তু এবার আগেই বলে দেওয়া হলো যে, এখন করোনার সময় তাই যখন এক্সামিনার পাসপোর্ট দেখতে চাইবেন তখন যেন আমার হাত থেকেই উনাকে পাসপোর্ট দেখাই।

ছোট একটা রুম, ৩ ফিট বাই ৪ ফিট এর বেশি হবে না। মধ্যবয়স্ক করে একজন এক্সামিনার বসে আছেন। আমি রুমে ঢুকেই উনাকে সালাম দিলাম, পরে উনি আমাকে বসতে বলে কথা শুরু করলেন। পুরো পরীক্ষার সময়টাতে উনার ব্যবহার আমার কাছে খুবই ফ্রেন্ডলি মনে হয়েছে (কপাল ভালো হলে ফ্রেন্ডলি এক্সামিনার পাবেন)। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে উনার কিছু প্রশ্ন বুঝতে পারি নাই (আসলে আমি শুনতেই পারি নাই) । কারন, এক্সামিনার আর আমার মাঝে গ্লাস দেয়া ছিলো, এই জন্য তার কথা বুঝতে বেশ সমস্যা হচ্ছিলো। উনাকে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন আমি  রিপিট করতে বলেছিলাম, উনি বেশ খুশি মনেই প্রশ্নগুলো রিপিট করেছিলেন।

মাস্ক পরে কথা বলার বিরক্তিকর অভিজ্ঞতাঃ

মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক ছিলো, তাই মাস্ক পরেই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু মাস্ক পরে কথা বলার অভিজ্ঞতা খুবই বাজে। একেতো পরীক্ষার প্রেশার তার উপরে মাস্ক পরে একটানা কথা বলতে গিয়ে নিঃশ্বাস নিতে বেশ কস্ট হচ্ছিলো। যেহেতু মাস্ক ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারবো না, তাই বাসায় প্র্যাকটিস এর সময় মাস্ক পরে প্রিপারেশন নিলে পরীক্ষার সময় এই সমস্যাটা হতো না। যাই হোক, পার্ট-১ মোটামুটি হলেও, পার্ট-২ আর পার্ট-৩ এ বেশ ভালোভাবেই প্রশ্নগুলোর উত্তর করতে পেরেছিলাম। সত্যি কথা হলো যে, পরীক্ষা কেমন দিলাম সেটা রেসাল্ট না দেখা পর্যন্ত বলাটা বেশ মুশকিল। কারন, অনেক কিছুই এক্সামিনারে মুডের উপরে নির্ভর করে। যেমন- অনেকেরই এমন অভিজ্ঞতা আছে যে, পার্ট-২(কিউ-কার্ড) এ ২ মিনিট কথা বলার আগেই এক্সামিনার তাকে থামিয়ে দিয়েছে, অথবা প্রশ্ন রিপিট করার সময় খুব বিরক্তি দেখিয়েছে। সুতরাং এখানে ভাগ্যের উপরে অনেকটা নির্ভর করতেই হয়।

কেমন রেসাল্ট হলোঃ

যাই হোক, ১৩দিন পরে যখন রেসাল্ট পেলাম তখন দেখি স্পিকিং এ ৭.০ পেয়েছি। আমি যা আশা করেছিলাম ঠিক সেই স্কোরটাই পেয়েছি।

Total 0 Votes
0

Tell us how can we improve this post?

+ = Verify Human or Spambot ?

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

*
*

Back To Top